অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের অনেক উপকারিতা রয়েছে। অনেকেই নিয়মিতভাবে অ্যাপেল সিডার ভিনিগার খেয়ে থাকেন। রান্নাবান্নায় এর অবাধ ব্যবহার। তবে শুধু রান্নার ক্ষেত্রেই নয়, আপেল সিডার ভিনিগারের উপকারিতার আরও নানা দিক রয়েছে।
ফরাসিতে ভিনিগার শব্দের অর্থ ‘সাওয়ার ওয়াইন’। সাধারণত ভিনিগার বলতে টক ওয়ানইকেই বোঝায়। আপেল সিডার ভিনিগারের ক্ষেত্রে আপেলের রসে ইস্ট ও ব্যাকটিরিয়া মিশিয়ে তাকে প্রস্তুত করা হয়। স্বাস্থ্যকর নানা কারণে এই ভিনিগারকে ডায়েটে রাখার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরাও।
প্রথম দফায় আপেলের রসের সঙ্গে ইস্ট ফারমেন্টেড হয়ে আপেলের রসকে অ্যালকোহলে পরিণত করে পরের ধাপে তা অ্যাসিটিক অ্যাসিড দিয়ে ফের ফারমেন্টেড হয়। অবশেষে তা ভিনিগারে পরিণত হয়।
আপেল সিডার ভিনিগারের উপকারিতা
বিভিন্ন ঘরগৃহস্থালীর কাজে যেমন এই আপেল সিডার ভিনিগার উপকারী, তেমনই শরীরের নানা অসুখবিসুখেও কাজে আসে এটি। এই ভিনিগার সৌন্দর্যরক্ষায়ও কাজে লাগে। কিন্তু ভিনিগার অ্যাসিডিক হওয়ার কারণে তা দৈনিক খাদ্যতালিকায় যোগ করার ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিয়ম পালন করা জরুরি।
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকবে
বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার খাওয়া শুরু করলে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে বেড়ে যায়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তে শর্করার মাত্রা প্রায় ৩১ শতাংশ কমে যায়। তবে এতসব উপকার পেতে এক মাস অন্তত এই পানীয়টি খেতে হবে।
এখন প্রশ্ন হলো, ডায়াবেটিসের মতো রোগকে দূরে রাখতে কিভাবে পান করতে হবে এই ভিনিগার? এক্ষেত্রে রাতে শুতে যাওয়ার আগে ২৫০ এমএল পানিতে ২ টেবিল চামচ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করতে হবে। তবেই মিলবে উপকার।
ওজন নিয়ন্ত্রণ
ডাক্তারের পরামর্শ মতো অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারকে যদি প্রতিদিনের ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তাহলে কিন্তু বাস্তবিকই ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসতে সময় লাগে না। আসলে এই পানীয়টিতে উপস্থিত নানাবিধ উপকারি উপদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে খুধা কমে যেতে শুরু করে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার খারণে স্বাভাবিকভাবেই ওজন কমতে সময় লাগে না।
তবে একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে যে, শুধু এই পানীয়টি খেলে কিন্তু তেমন একটা উপকার মিলবে না। ফল তখনই পাবেন, যখন শারীরিক পরিশ্রম করার পাশাপাশি এই পানীয়টি পান করবেন। দিনে বড় দু’চামচের বেশি আপেল সিডার খাবেন না, খেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নেবেন। এ ছাড়া যখনই এই ভিনিগার খাবেন, তা অবশ্যই পানির সঙ্গে মিশিয়ে পাতলা করে ফেলতে হবে।
ডায়াবিটিসের সমস্যায় উপকারী
ডায়াবিটিসের সমস্যায় এই ভিনিগার উপকারী। মূলত ইনসুলিন তৈরি করতে না পারা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্টের কারণেই রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ে। খাওয়া-দাওয়ার আধ ঘণ্টা আগে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ আপেল সিডার মিশিয়ে খেলে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে।
মূলত শরীরচর্চার ক্ষেত্রে এই আপেল সিডারের কথা উঠলে অনেকেই কেবল ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের দিকটাই ভাবেন। তবে এই বিশেষ উপকার ছাড়াও আপেল সিডারের আরও নানা কার্যকর দিক রয়েছে। হজমের সমস্যাতে মেটাতেও এই ভিনিগার খুব কার্যকর। গরম পানিতে এক চামচ আপেল সিডার ভিনিগারে বদহজম থেকে মুক্তি মেলে সহজেই।
মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়
মুখগহ্বরে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াদের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেই মূলত দুর্গন্ধ বের হতে শুরু করে। আর ঠিক এই কারণে এমন সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার ব্যবহার করার প্রয়োজন রয়েছে। আসলে নিয়মিত এক গ্লাস পানিতে পরিমাণ মতো ভিনিগার মিশিয়ে গার্গেল করা শুরু করলে ক্ষতিকর জীবাণুরা সব মারা পরে (apple cider vinegar cures)। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুখ থেকে বদ গন্ধ বের হওয়ার আশঙ্কা আর থাকে না বললেই চলে!
একথা জানা আছে কি সারা দিন নানাভাবে বিষাক্ত উপাদানেরা সব আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। আর এই সব টক্সিক উপাদান যদি ঠিক সময় শরীর থেকে বের করে দেওয়া না যায়, তাহলে কিন্তু মহা বিপদ! কিন্তু প্রশ্ন হলো এই কাজটি করবেন কিভাবে? এক্ষেত্রে প্রতিদিন পানি ও অ্যাপেল সাইডার ভিনিগার মিশিয়ে পান করতে হবে। এমনটা করলে শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর উপাদান সব বেরিয়ে যাবে।
স্কিন টোনার হিসেবেও কাজে আসে
নিয়মিত টোনার হিসেবে এই ভিনিগারটিকে কাজে লাগালে একদিকে যেমন ত্বকের পিএইচ লেভেল ঠিক থাকবে, তেমনি স্কিনে জমতে থাকা ময়লাও সব ধুয়ে যাবে। সেই সঙ্গে ত্বকের অন্দরে রক্তের প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে স্কিন টোনের উন্নতি ঘটবে। শুধু তাই নয়, স্কিনের উজ্জ্বলতাও বাড়বে চোখে পড়ার মতো।
এক্ষেত্রে সম পরিমাণে পানি এবং অ্যাপেল সাইডার ভিনেগার মিশিয়ে যে মিশ্রণটি তৈরি হবে, তাতে তুলো চুবিয়ে ধীরে ধীরে সারা মুখে লাগাতে হবে। কিছু সময় পরে ধুয়ে ফেলতে হবে মুখটা। রোদে ঘুরে ঘুরে কি চামড়া গেছে পুড়ে? তাহলে তো বন্ধু এখনই ত্বকের পরিচর্যায় কাজে লাগাতে হবে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারকে। কারণ পানি ও ভিনিগারটি মিলিয়ে তৈরি মিশ্রনটির সাহায্যে ত্বকের ষত্ন নিলে হারিয়ে যাওয়া স্কিন টোন ফিরে আসতে সময় লাগবে না। সেই সঙ্গে ত্বকের প্রদাহও কমবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যাবে কমে।
চুলের হারিয়ে যাওয়া আর্দ্রতা ফিরে আসে
শীতকাল মানেই ত্বকের পাশাপাশি চুলের আর্দ্রতা যায় কমে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই হেয়ার ফলের মাত্রা তো বাড়বেই, সেই সঙ্গে চুলে জট এবং ড্রাই স্ক্যাল্পের মতো সমস্যাও হতে পারে। এমনকি বাড়তে পারে খুশকির প্রকোপও। কিন্তু যদি চান তাহলে এই সব সমস্যা থেকে কিন্তু দূরে থাকতে পারেন। তবে তার জন্য চুলের যত্নে কাজে লাগাতে হবে অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারকে, তাহলেই দেখবে কেল্লা ফতে!
আসলে এই বিশেষ ধরনের ভিনিগারটি চুল এবং স্ক্যাল্পের আদ্রতা যাতে কমে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে চুলের সৌন্দর্য কমে যাওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি নানাবিধ স্ক্যাল্পের সমস্যাও দূরে থাকতে বাধ্য হয়। এত ঠাণ্ডাতেও চুলকে আদ্র রাখতে এক কাপ অ্যাপেল সাইডার ভিনিগারে ২ কাপ পানি মিশিয়ে তৈরি করতে হবে একটি মিশ্রণ। তারপর সেই মিশ্রনের সাহায্যে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে চুল।
প্রসঙ্গত, এমনভাবে প্রতিদিন চুলের পরিচর্যা করলেই দেখবে ফল মিলবে একেবারে হাতে-নাতে! শ্যাম্পু করার পর চুল ধুয়ে নিন আপেল সিডার ভিনিগার মেশানো জল দিয়ে। কন্ডিশনারের সমান উপকার পাবেন। চুল নরম হবে, ব্যাকটিরিয়ার উপস্থিতির জন্য খুশকির সমস্যাও কমবে দ্রুত।